গোলাপের সুগন্ধযুক্ত, সুদৃশ্য, সুমিষ্ট, রসালো এবং সুস্বাদু একটি ফল গোলাপজাম। যদিও আমাদের দেশে এখন এটি অপ্রচলিত এবং বিলুপ্তপ্রায়। দেশের বিভিন্ন জেলায় এ ফলটির নামে ভিন্নতা রয়েছে। আজ অল্প কিছু ফল আমার নিজ বাড়ির বাগানের একটা গাছ থেকে সংগ্রহ করেছি। আমার বাগানে এ গাছটি ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে লাগানো হয়েছে। লাগানোর ৪-৫ বছর পর থেকেই প্রতি বছরই গাছটিতে বেশ কিছু ফল ধরে কিন্তু ইঁদুর, বাদুড় এবং পাখির কবল থেকে এই ফল রক্ষা করা সম্ভব হয় না। ওরা পাকার আগেই অর্থাৎ কাঁচা অবস্থাতেই ওগুলো সাবার করে দেয় অথবা কামড়ে নষ্ট করে ফেলে দেয়। অল্প কিছু ফল এবছর ফ্রুট ব্যাগে ভরে রাখা হয়েছিল । যা থেকে আজকের এই ফলগু‌লো সংগ্রহ করা হয়েছে।

গোলাপজাম এর ইংরেজি নাম Malabar plum, Rose apple ,Gulab Jamun ইত্যাদি। আর এর বৈজ্ঞা‌নিক নাম Syzygium jambos. এটি একটি উৎকৃষ্ট মানের ফল। ফল হিসাবে গোলাপজাম আমাদের দেশে খুব বেশি সুপরিচিত না হলেও এই ফল খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। দেখতে সুন্দর অবয়ব, পাকলে ফিকে হলুদ কিংবা হালকা গোলাপী রঙ ধারণ করে। আর এর গোলাপ ফুলের ন্যায় ঘ্রাণ যে কোন মানুষের মনকে বিমোহিত করে তোলে। কাঁচা ফলের রং সবুজ এবং স্বাদে কষ্টা। প্রতি ফলে সাধারণত দুইটি বীজ থাকে। তবে কিছু কিছু ফলে এক কিংবা তিনটি বীজও থাকতে পারে।

এই ফলে প্রায় সব ধরণের পুষ্টি উপাদানই বিদ্যমান। মাঝারি আকারের এই ফলগাছ প্রায় ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। ফলটির আদি নিবাস দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া। বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপিন, চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে এ ফল উৎপাদিত হয়। গোলাপজাম গাছ দীর্ঘদিন বাঁচে। একটা গাছ প্রায় ৪০/৫০ বছর পর্যন্ত ফল দান করে। গাছ মাঝারী আকৃতির। পাতা সবুজ। গাছ লাগানোর ৪/৫ বছর পর থেকেই ফল সংগ্রহ করা যায়। গোলাপজাম গাছে মাঘ-ফাল্গুন মাসে ফুল আসে এবং জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ মাসের মধ্যে ফল পাকে। এর ফুলও খুবই দৃষ্টিনন্দন।

গোলাপজাম দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি এর ফুলও খুবই দৃষ্টিনন্দন। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে। পাকতে শুরু করলে ধবধবে সাদা অথবা হলদে-সাদা হয়। কাঁচা ফল খেতে কষ্টা হলেও পাকা ফল হালকা মিষ্টি, নরম ও কচকচে। গোলাপজাম ফলে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। নিম্নে গোলাপজাম (Rose-apples), পুষ্টি মূল্য দেয়া হলো:

প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) পাকা তাজা গোলাপজামের পুষ্টিগত মান-
খাদ্য শক্তি ১০৫ কিজু (২৫ kcal)
শর্করা 5.7 g
স্নেহ পদার্থ 0.3 g
প্রোটিন 0.6 g

ভিটামিনসমূহ
--------------------
ভিটামিন এ সমতুল্য 17 μg
থায়ামিন (বি১) 0.02 mg
রিবোফ্লাভিন (বি২) 0.03 mg
ন্যায়েসেন (বি৪) 0.8 mg
ভিটামিন সি 22.3 mg

ধাতব সমুহ
----------------
ক্যালসিয়াম 29 mg
লোহা 0.07 mg
ম্যাগনেসিয়াম 5 mg
ম্যাঙ্গানিজ 0.029 mg
ফসফরাস 8 mg
পটাশিয়াম 123 mg
দস্তা 0.06 mg

(সংগৃ‌হিত:

মো. আলী আশরাফ খান 

মহাব্যবস্থাপক (অবসরপ্রাপ্ত), বিসিক।)